মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সরকারের ভাতা ও আর্থিক সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের কারণে দেশ ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘ভাতা বিতরণে মোবাইল প্রযুক্তি: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এমন অভিমত জানান আলোচকেরা।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন: মোস্তফা জব্বার
আলোচনায় অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ইউসুফ আলী, ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক, এমটব-এর সাবেক মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির ও বেসিস-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।
সংগঠনের সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় সরকারি ভাতা বিতরণে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে।
আরও পড়ুনঃ বিটিআরসি ভবনের নির্মাণ উদ্বোধন করলেন মোস্তফা জব্বার
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘টাকাকে আমরা আর কাগজের মুদ্রায় দেখতে চাই না। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর বিধিবিধানগুলোও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তারাও এখন পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করছে এবং উৎসাহিত করছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এখন এমএফএস অপারেটরগুলোর মধ্যে আন্তলেনদেন বা ইন্টারঅপারেবিলিটির ব্যবস্থা করে তাহলে মানুষের জীবন আরও সহজ হবে এবং এমএফএস সেবা গ্রহণযোগ্যতা পাবে সাধারণ মানুষের কাছে।
আরও পড়ুনঃ ‘বিবেকের আয়না’ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরছে ‘নগদ’
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত দেশের এমন কেউ নেই যে ডিজিটাল সেবার উপকার পাননি। এখন চাইলেই মানুষ যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো কারও সাথে যুক্ত হতে পারছেন। করোনাকালে দেশের দুর্গম অঞ্চলে সরকার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে। এখন সরকারি যেসব ভাতা, সবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে ভাতাভোগীর হাতে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে এমএফএস অপারেটরগুলো।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, আমরা যেন নির্বিঘ্নে সমাজিক নিরাপত্তা ভাতা দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। তার জন্য আমরা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মতো প্রযুক্তি গ্রহণ করি, যাতে ঘরে বসেই মানুষ তাদের ভাতা পেয়ে যায়। কাজটি সহজ করে দেওয়ার জন্য ‘নগদ’-কে ধন্যবাদ জানাই।
আরও পড়ুনঃ প্রতি সেকেন্ডে ‘নগদ’ এ যুক্ত হচ্ছে তিনজন গ্রাহক
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, আর্থিক খাতে ডিজিটালাইজেশন না করা গেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জিত হবে না এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় না আনা গেলেও লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব হবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘নগদ’ যাত্রা শুরু করে।
“আজ দুই বছর পর এসে অন্তত এটুকু বলতে পারি, আমাদের যে লক্ষ্য তার খুব কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে। ‘নগদ’ একটি সরকারি সেবা হওয়ায় অন্য আরেকটি সরকারি সংস্থাও ‘নগদ’-এর ওপর আস্থা রাখছে এবং সহজেই তাদের ভাতা, সহায়তা ও অনুদান বিতরণ করতে পারছে। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগতভাবেও আমরা এতটাই নিজেদের তৈরি করেছি যে, মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোনো সেরা কোম্পানির সঙ্গেও ‘নগদ’-এর তুলনা হতে পারে,” যোগ করেন তানভীর।
‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এমএফএস বিশেষ করে ‘নগদ’-এর কারণেই সরকারি ভাতা ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন এসেছে এবং তালিকায় থাকা ভুয়া গ্রাহকদের বাদ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর সে কারণে সরকারের বরাদ্দ থেকে ছাড় করা টাকাও আবার সরকারকে ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এমটব-এর সাবেক মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, ‘আমাদের জার্নি হচ্ছে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে। সরকারের কৌশলগত জায়গাগুলোয় সবাই একসাথে কাজ করছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে প্রযুক্তির ধারায় নিয়ে আসা একটি সফলতা। তিনি বলেন, এক সময় পিতলের একটি টোকেন নিয়ে আমরা ব্যাংকে বসে থাকতাম। সরকারি অফিস থেকে টাকা বিতরণ করা হতো। এখন মোবাইলের মাধ্যমে টাকা ভাতাভোগীর হাতে খুব সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এর পেছনে দূরদর্শী চিন্তা অন্যতম কারণ। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। সামনে সব ধরনের লেনদেন ডিজিটাল হয়ে যাবে। তখন আরও বেশি মানুষকে আর্থিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।’
বেসিস সভাপতি আলমাস কবির বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার একটি বড় সুফল হলো এমএফএস। তিনি বলেন, এমএফএস এখন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। ডাক বিভাগের অনেক বড় নেটওয়ার্ক আছে, সেটি কাজে লাগিয়ে ‘নগদ’-কে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এখন দেশ ডিজিটালাইজেশনের দিকে যাচ্ছে। সামনে ক্যাশলেস সোসাইটি হতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে এমএফএস। তখন যেকোনো ধরনের পেমেন্ট থেকে শুরু করে যেকোনো আর্থিক লেনদেন হবে এমএফএস দিয়ে। সামনে এই সেবাকে তরান্বিত করতে ইন্টারঅপারেবিলিটি প্রয়োজন। তাহলেই মানুষের কাছে খুব সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
আলোচনার সূত্রপাত করে সমীর কুমার দে বলেন, আগে যেখানে মোবাইলের মাধ্যমে ভাতা বিতরণে সরকারের হাজারে ২২ টাকা করে খরচ হতো, সেটি এখন ৭ টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।